খুলনা বিভাগে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ ফের আলোচনায়। অভিযোগ উঠেছে—এখানে পদোন্নতি বা বদলির প্রধান মানদণ্ড হয়ে উঠেছে টাকার পরিমাণ, যোগ্যতা নয়।

বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্যমতে, সদ্য বিদায়ী খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকারের আমলেই এ দুর্নীতির রূপ নেয় এক অঘোষিত ‘পোস্টিং মার্কেট’-এ। মাত্র ১০ মাস ৩ দিনের দায়িত্বকালীন সময়ে তার দপ্তরে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা পদায়নে লাখ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।


💰 ‘দর তালিকা’ অনুযায়ী বদলি

সূত্র জানায়, লাভজনক উপজেলা বা গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের জন্য ঘুষের অঙ্ক নির্ধারিত ছিল বেশি। যশোর সদর উপজেলার এসিল্যান্ড পদে নিয়োগের জন্য ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদরের এসিল্যান্ড পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য—কারণ, পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হলেও কেউ রাজি হননি। এতে জনসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।


🏢 অভয়নগরে ইউএনও নিয়োগেও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ

যশোরের অভয়নগর উপজেলা প্রশাসনেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ইউএনও পদে নিয়োগের জন্য কমিশনার কার্যালয় থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করা হয়। কর্মকর্তারা টাকা না দেওয়ায় পদটি এখনো শূন্য।

স্থানীয় বাসিন্দা আবু কালাম বলেন,

“ইউএনও না থাকায় উন্নয়ন প্রকল্প ও সরকারি সেবার কাজ প্রায় বন্ধ। সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছে।”


📋 ইউনিয়ন পর্যায়েও ‘ট্যারিফ সিস্টেম’

ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের বদলিতেও চলছে টাকার বাণিজ্য। অভিযোগ রয়েছে, কিছু কর্মকর্তা এক ইউনিয়ন থেকে অন্যত্র বদলি হওয়ার পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পুনরায় বদলি পাচ্ছেন ঘুষের বিনিময়ে।

এই অনিয়মের মূল সমন্বয় করছেন বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম—এমন দাবি করেছেন একাধিক কর্মকর্তা।


⚖️ ‘অযৌক্তিক শর্ত’ না মানায় বদলি আটকে

খুলনার দিঘলিয়া ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দুই ইউএনও পারস্পরিক বদলির জন্য আবেদন করলেও কমিশনার তা আটকে দেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, অর্থ না দেওয়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়নি।


🏛️ খুলনা সিটি কর্পোরেশনে নিয়োগ বাণিজ্য

শুধু প্রশাসন নয়, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নিয়োগেও ফিরোজ সরকারের নাম জড়িয়েছে। অভিযোগ, অর্থের বিনিময়ে প্রকৌশলী ও নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসনের ভেতরের এক সূত্র জানায়, “ইদের আগে ঠিকাদারদের ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে দেখা করতে বলতেন ফিরোজ সরকার—সবকিছু ঘিরেই ছিল আর্থিক স্বার্থ।”


🧾 স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ

প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “পদায়নে এমন ঘুষ বাণিজ্য জনসেবার মান নষ্ট করছে, প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা ভেঙে দিচ্ছে।”


🗣️ কমিশনারের প্রতিক্রিয়া

যোগাযোগ করা হলে বিদায়ী বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে প্রশাসনের ভেতরে-বাইরে দাবি উঠেছে, তার আমলের পদায়ন-সংক্রান্ত সব অভিযোগের স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত।