বর্ণাঢ্য আয়োজনে শুরু হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব — ৪৯তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে রাঙ্গামাটির রাজবন বিহারে বেইন ঘর উদ্বোধন ও চরকায় সুতা কাটার মধ্য দিয়ে এ ধর্মীয় উৎসবের উদ্বোধন করা হয়।

মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের শিষ্য ও রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবির মঙ্গল সূত্র পাঠের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন বেইন ঘর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত উদ্যোক্তা মিসেস মঞ্জুলিকা খীসা চরকায় সুতা কেটে চীবর বুননের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন।

উদ্বোধনী দেশনায় ভান্তে বলেন, “চীবর দান হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মে সর্বোত্তম দান। এটি আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও ভক্তির প্রতীক।” পরে আবাসিক ভিক্ষুরা বেইন ঘর প্রদক্ষিণ করে চীবর বুননে অংশ নেওয়া পুণ্যার্থীদের আশীর্বাদ প্রদান করেন।

দুই দিনব্যাপী এই উৎসবের সমাপনী হবে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে। ওইদিন বিকেলে ভিক্ষু সংঘের কাছে ২৪ ঘণ্টায় প্রস্তুতকৃত চীবর উৎসর্গ করা হবে।

শুক্রবার সকালে প্রথম পর্বে সংঘদান, অষ্ট পরিষ্কার দান, সদ্ধর্ম দেশনা ও ভিক্ষু সংঘকে পিণ্ডদান শেষে দুপুরে কঠিন চীবর ও কল্পতরু শোভাযাত্রা বের হবে। বেইন ঘর থেকে শুরু হয়ে এই শোভাযাত্রা রাজবন বিহার এলাকা প্রদক্ষিণ করে বিশ্বশান্তি প্যাগোডার পাশে বড় মাঠে গিয়ে শেষ হবে।

এই শোভাযাত্রায় চীবরের সঙ্গে বুদ্ধমূর্তি, অষ্ট পরিষ্কার সামগ্রী ও কল্পতরু দান করা হবে। পরে হবে ভিক্ষু সংঘের সদ্ধর্ম দেশনা ও অতিথিদের ধর্মীয় ভাষণ।

বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ মতে, আড়াই হাজার বছর আগে গৌতম বুদ্ধের শিষ্যা বিশাখা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা তৈরি, রং করা, শুকানো ও তাঁতে বুনে চীবর প্রস্তুতের প্রথা শুরু করেন। সেই প্রথার ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সাল থেকে রাজবন বিহারে এ উৎসব পালিত হচ্ছে।

এবারের উৎসবে রাজবন বিহার প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়েছে অর্ধশতাধিক চরকা ও দুই শতাধিক বেইন। প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী চীবর তৈরির কাজে অংশ নিয়েছেন। উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে ৬ শতাধিক পুলিশ সদস্য নিরাপত্তা দায়িত্বে রয়েছেন।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও বিদেশ থেকেও হাজারো পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থী অংশ নিচ্ছেন এই ধর্মীয় উৎসবে। রাজবন বিহার এলাকা উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে; চলছে ধর্মীয় কীর্তন, নাটক, বেইন বোনা ও ফানুস উড়ানোর আয়োজন।

চূড়ান্ত দিনে চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় প্রয়াত ধর্মগুরু বনভান্তের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ভিক্ষু সংঘের কাছে কঠিন চীবর উৎসর্গ করবেন। রাতে ফানুস উড়িয়ে পরিসমাপ্তি ঘটবে এই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসবের।