সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ঢাকা সেনানিবাসের একটি নির্দিষ্ট ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একাধিক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা বর্তমানে সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন।
সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সেনা হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত তারিখে তাঁদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে এবং আদালতের কার্যক্রম শেষে পুনরায় সেনা হেফাজতে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
এই বিশেষ ব্যবস্থার পেছনে কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে—সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের বিচার প্রক্রিয়া যেন সাধারণ সেনা সদস্যদের মনোবলে কোনো নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে। সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা, মর্যাদা ও ঐক্য বজায় রাখতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে সমালোচকরা বলছেন, আইনের চোখে সবাই সমান—এই মূল নীতির ব্যত্যয় ঘটলে তা ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের জন্য অশনিসংকেত হতে পারে। অতীতে জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক (অব.) আব্দুর রহিম এবং ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ একাধিক কর্মকর্তাকে সাধারণ কারাগারেই বন্দী রাখা হয়েছিল। এমনকি, মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রহিম ২০২১ সালের ১৩ আগস্ট কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেন—তখন সেনা সদস্যদের মনোবল বা মর্যাদা নিয়ে তেমন কোনো বিতর্ক দেখা যায়নি।
একইভাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আজমী দীর্ঘ আট-নয় বছর ধরে নিখোঁজ অবস্থায় সেনা হেফাজতে ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। সেই সময়ও বাহিনীর মনোবল নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য বা উদ্যোগ প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
তবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সামগ্রিক স্থিতিশীলতা বিবেচনায় সরকার যদি কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেয়, তা গ্রহণযোগ্য বলেই মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতির গর্ব—সার্বভৌমত্বের রক্ষক। জাতি তাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতিই আশা করে।
সেনাবাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী, “ইনসাফের ব্যাপারে নো কম্প্রোমাইজ”—এই অঙ্গীকার যেন বাস্তবে প্রতিফলিত হয়, সেটিই জাতির প্রত্যাশা। ন্যায়বিচারের প্রশ্নে কোনো আপস নয়—এমন অবস্থানই সেনাবাহিনীকে আরও সম্মানিত করে তুলবে।