বঙ্গোপসাগরের উপকূলে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হচ্ছে শুটকি মৌসুম। এ মৌসুমকে ঘিরে বাগেরহাটের মোংলা উপকূল এখন ব্যস্ত সময় পার করছে হাজারো জেলে ও মহাজন। বনবিভাগের কাছ থেকে পাস-পারমিট নিয়ে শনিবার (২৫ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে তারা মাছ ধরতে সমুদ্রে যাত্রা করবেন।
এখন মোংলার বিভিন্ন ঘাটে চলছে জেলেদের সরঞ্জাম প্রস্তুতি, ট্রলার মেরামত ও খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহের ব্যস্ততা।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, আগামী ২৬ অক্টোবর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে শুটকি মৌসুম। দুবলার আলোরকোল, অফিসকেল্লা, নারকেলবাড়ীয়া ও শেলার চরে অবস্থান করবেন জেলেরা।
বনবিভাগের অনুমোদনে জেলেদের জন্য ৯০০টি বসতঘর এবং ৮০টি দোকান স্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মাছ বেচাকেনার জন্য ১০০টি ডিপোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পুরো মৌসুমে প্রায় ১০ হাজার জেলে ও মহাজনের সমাগম হবে এসব চরে।
তিনি আরও জানান, জেলেরা চরে অস্থায়ী ঘর, মাছ শুকানোর চাতাল, জেটি ও ঘাট নির্মাণ করবেন। তবে সুন্দরবনের কোনো গাছ বা কাঠ ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোংলার মহাজন কালাম ব্যাপারী ও লতিফ হাওলাদার বলেন,
“আমরা যখন চরে থাকি, তখনই ঝড়–জলোচ্ছ্বাসের মৌসুম থাকে। ঝড়ে ট্রলার ডুবে যাওয়া বা মাছ পচে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবুও জীবন-জীবিকার তাগিদে সাগরে নামতেই হয়।”
জেলে রফিকুল ইসলাম জানান,
“বনের ক্ষতি না করে ঘর ও চাতাল নির্মাণের প্রয়োজনীয় বাঁশ, চট, বেড়া আমরা সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি।”
অন্যদিকে মহাজন মোস্তফা সানা বলেন,
“একটি পূর্ণ ট্রলার নিয়ে দুবলার চরে যেতে ২০–২৫ লাখ টাকা লাগে। আমরা ধারকর্জ করে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো মাছ পাবো, না হলে বড় লোকসান।”
জেলে কালাম শেখ বলেন,
“কয়েক বছর শান্ত থাকার পর এখন আবার জলদস্যুতা বেড়েছে। গত বছর মুক্তিপণ দিতে হয়েছে পৌনে তিন লাখ টাকা। আমরা প্রশাসনের নিরাপত্তা চাই।”
বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী আরও জানান, গত মৌসুমে শুটকি থেকে ৬ কোটি টাকা রাজস্ব এসেছে, এবার অনুকূল আবহাওয়া পেলে ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের আশা করছেন। জেলেদের নিরাপত্তায় কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।