বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান অপরিসীম। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত কোটি কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি নিজেদের ঘাম ঝরানো শ্রমের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে নিরলসভাবে অবদান রেখে চলেছেন। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা কিংবা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ তাঁরা পরিবার ও স্বজনদের কাছে পাঠান, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিবছর বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের রেমিট্যান্স দেশে আসে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এ অর্থের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয়। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে অনেক পরিবার নতুন ঘর নির্মাণ করছে, সন্তানদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করছে, আবার কেউ কেউ ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রেমিট্যান্স শুধু পরিবারকে স্বচ্ছল করে তুলছে না; বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন, শিল্প খাতে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান তৈরিতে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ একটি বড় ভূমিকা রাখছে।
অন্যদিকে, প্রবাসীরা নিজেরাও নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। ভিসা ও বৈধ কাগজপত্রের জটিলতা, কম মজুরি, নিরাপত্তাহীনতা এবং স্বাস্থ্যসেবার অভাব—এসব সমস্যা তাঁদের জীবনকে কঠিন করে তোলে। তারপরও দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং পরিবারের দায়িত্ববোধ থেকেই তাঁরা পরিশ্রম করে যান।
সরকার বলছে, প্রবাসীদের সুবিধার জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সহজে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইসাথে, হুন্ডি প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে যাতে বৈধ পথে টাকা আসার প্রবাহ আরও বাড়ে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সই আগামী দিনে বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম ভরসা হয়ে থাকবে। তাই প্রবাসীদের কল্যাণে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।