‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’—এই অমর গানের স্রষ্টা, তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র ৬৯তম জন্মবার্ষিকী বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর)। সত্তরের দশকের অন্যতম প্রতিভাবান এই কবি তাঁর শিল্পমগ্ন উচ্চারণে বাংলাদেশের কবিতায় অর্জন করেছেন এক অনন্য স্বীকৃতি। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে, ১৯৯১ সালের ২১ জুন, তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ২০২৪ সালে তাঁকে সাহিত্যে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয়।

দিনটি উপলক্ষে কবির স্মৃতিবিজড়িত মোংলার মিঠেখালিতে রুদ্র স্মৃতি সংসদের আয়োজনে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সকালে কবির কবরজিয়ারত, পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। পরে রুদ্র স্মরণানুষ্ঠান ও অসহায় মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে দিনব্যাপী স্বাস্থ্যক্যাম্প পরিচালনা করা হবে।

অকালপ্রয়াত এই কবি তাঁর সৃষ্টিতে নিজেকে মিলিয়ে নিয়েছিলেন আপামর মানুষের আত্মার সঙ্গে। সাম্য, মুক্তিযুদ্ধ, ঐতিহ্যবোধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জ্বল তাঁর কবিতা আজও নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগায়।
তিনি লিখেছিলেন—

“জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন”—
এই নির্মম বাস্তবতার পাশাপাশি তিনি উচ্চারণ করেছিলেন অবিনাশী আশাবাদ,
“দিন আসবেই দিন সমতার।”

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র কাব্যে যেমন আছে শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় প্রতিবাদ, তেমনি রয়েছে প্রেম, স্বপ্ন ও সৌন্দর্যের মায়াবী স্পর্শ।

মাত্র ৩৫ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে তিনি সাতটি কাব্যগ্রন্থ, গল্প, কাব্যনাট্য এবং অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেন। তাঁর জনপ্রিয় গান “ভালো আছি ভালো থেকো”–এর জন্য তিনি ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ গীতিকার (মরণোত্তর) সম্মাননা পান।
এ ছাড়া ‘উপদ্রুত উপকূল’ ও ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি টানা দুই বছর ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার’ অর্জন করেন।

জাতীয় কবিতা পরিষদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট গঠনে তাঁর ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ আজও বেঁচে আছেন তাঁর কবিতায়, তাঁর গানে—
তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীকে।